Headline if Discussion : "
  • হাদিস মানা কতটুকু জরুরি।"৪-র্থ অালোচনা":
  • "
    Headline in Engish : "
  • How important it is to accept the hadith. "4th discussion":
  • "

    ### হাদিস অনুষরণের প্রয়োজনীয়তা ও অনুমিত মাত্রা এবং যুক্তি খন্ডন পর্বঃ

    এত সময় অামরা জানলাম ইসলামী শরিয়াহ মতে মুহাম্মদ (সা:) এর কর্তব্য, করণীয় ও মর্যাদা। কুরঅানের সকল বিষয় অালোচনা ও পর্যালোচনা শেষে একটাই সিদ্ধান্ত পরিলক্ষিত হয়। তা হল কুরঅানের অাইন, নিয়ম ও বিধান বাস্তবায়নে নবী মুহাম্মদ (সা:) সর্বাগ্রে উপনিত এবং একমাত্র অনুষরণীয় ব্যাক্তি। শুধু তাই নয় তিনি অাল্লাহর কর্তিক সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সর্বচ্চ সুন্দর চরিত্রের অধিকারি ব্যাক্তি। কুরঅানের নির্দেশ বাস্তবায়নে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে মতবিরোধের পথ বন্ধ করার একমাত্র মাধ্যম নবী মুহাম্মদ (সা:) এর সুন্নাহ বা জীবনাদর্শ যা কুরঅান কর্তিক স্বিকৃত। পূর্বের কিতাবধারিদের মত অাল্লাহর কিতাবের অাইন বাস্তবায়নে মতপার্থক্য করে বিপথে যাওয়ার পথ বন্ধ করার এক মাত্র অবলম্বন নবী মুহাম্মদ (সা:)। যুক্তি খন্ডনের শুরুতে কুরঅান ও হাদিসের সংক্ষিপ্ত কিছু বৈশিষ্ট অালোচনার অালোকে জেনে নেয়া যাক।

    # কুরঅান: 

    * জিবরাইল (অা:) এর মাধ্যমে নবী করিম (সা:) এর কাছে অাসা অাল্লাহর বাণী।
    * অাল্লাহ কর্তিক প্রদত্ত হুবহু অাল্লাহর নিজের বিন্যাশকৃত ভাষায় নাজিল হওয়া কিতাব। 
    * ফুসসিলাত (হা-মীম সিজদাহ) 41:3
    এই কিতাব বিস্তারিতভাবে বিবৃত,অার এই কুরআনের আয়াতসমূহ আরবী ভাষায় নজীল হয়েছে, এটি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষদের জন্য। । অার্থাৎ: কুরঅানে অাছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য, অাদেশ ও নিষেধ, রাষ্ট্র ও পরাষ্ট্র নীতি, ভূগল ও বিজ্ঞান, এছারাও রয়েছে ধর্মিয় বিধি বিধান ইত্যাদি। এই সমস্ত বিষয়াদি কখনও রচনা অাকারে। কখনও ভাবসম্প্রসারণের অাকারে। অাবার কখনও বিস্তারিত ব্যাক্ষার সংক্ষিপ্ত সুত্রের অাকারে উপস্থাপন করা হয়েছে কুরঅানের বাক্যাংশের ভেতরে, যাকে সারমম্য বলা যেতে পারে, যেমন: একলাইনের একটি সুত্র দিয়ে একাধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত অংকের ব্যাক্ষা বিশ্লেষণ ও সমাধান করা যায় ঠিক তেমনই। এছারাও রয়েছে অস্পষ্ট কিছু বাক্যাংশ যার সমাধান অাল্লাহ ছারা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যেহেতু এটা লিখন ও পঠন জগতের সকল স্তর স্পর্ষ করেছে তাই বলা হয় এটা বিস্তারিত বর্ণনা সম্বলিত কিতাব। 
    * এই কিতাব ধরার সময় অবশ্যই পাক পবিত্র থাকতে হবে। তবে তৈরির কাজে নিয়োজিত ব্যাক্তি ছারা। 
    * কুরঅানের অাইন কানুন মান্য করা বাধ্যতা মূলক। তবে তা বিশেষ প্রয়োজনে শিথিল যোগ্য। অার তা করতে হবে মুহাম্মদের (সা:) দেখানো পথে। ওন্যথায় তা গ্রহণীয় হবে না। যেমন: কুরঅানের নির্দেশ চোরের হাত কাটতে হবে। কিন্তু কোন চোরের হাত কাটতে হবে তা কুরঅানে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়নি বরং কুরঅান বলে দিয়েছে মুহাম্মদ (সা:) এর কাছে জিজ্ঞাসা করতে। অার মুহাম্মদ (সা:) বলছেন অসহায় ক্ষুধার তারণায় নিরুপায় হয়ে কেও চুরি করলে তাকে শাস্তির বদলে কর্মসংস্থান করে দাও অথবা সম্ভব না হলে তাকে কিছু দান কর অথবা সৎ উপদেশ দাও যাতে সে সঠিক পথ পেতে পারে। সাবলম্বী চোরের হাত কেটে দাও সে যদি নবী (সা:) এর কন্যাও হয়।

    # হাদিস: 

    * ওহী-এর শাব্দিক অর্থ ‘ইশারা করা’ গোপনে অপরের সাথে কথা বলা। 
    মোটকথা আরবী অভিধান ও কুরআনে শাব্দিক ব্যবহারের দৃষ্টিতে ‘হাদীস’ শব্দের অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, খবর ও ব্যাপার এবং বিষয়বস্তুর বিস্তারিত ব্যাক্ষা। 
    * সহজে বেঝার জন্য অামাদের মূল প্রতিপাদ্য হাদিস হচ্ছে কোন ফেরেস্তা ছাড়াই নবী (সা:) এর প্রতি অাল্লাহর ইশারা করা বিষয়ই হাদিস। যা কুরঅানে বিস্তারিত অনা হয়নি শুধু অাংকের সুত্রের মত প্রয়োগ দেখানো হয়েছে। বিস্তারিত নবী (সা:) হিকমাহের ওহীর জ্ঞানের মাধ্যমে নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন।
    * কুরঅানের শাব্দিক অার্থ ও বাস্তবতার অালোকে হাদিস মূলত ৪ প্রকার। 
    ১-ম: কুরঅানের অায়াতের ব্যাক্ষা।
    ২-য় সুন্নাহ: রাসূল (সা:) এর হিকমাহের ওহী, 
    ৩-য় জাল হাদিস: রাসূল (সা:) বলেন নাই কিন্তু তার নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে এমন বিষয়। যেমন অাল্লাহর বাণী না হওয়া সত্তেও কিছু লোক সরাসরি অাল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল নবী (সা:) এর জীবন দশায় ও তার পূর্বের কিতাবীদের মধ্য হতে এবং পরবর্তীদের মধ্য হতে ঠিক তেমনই।
    ৪-র্থ জয়িফ: রাবী বা বর্ণনা কারীদের সন্দেহ পূর্ণ বর্ণনা ও ব্যাক্তিগত ত্রুটিপূর্ণ চরিত্রের কারণে তার বর্ণনার প্রতি সন্দেহ।

    * নবী (সা:) হতে ইজতিহাদ বা গবেশনালব্ধ কথা, কাজ ও নির্দেশই হাদিস। যেমন: * ইউসুফ 12:4
    স্মরণ কর, ইউসুফ যখন তার পিতাকে বলেছিল, ‘হে আব্বাজান! আমি (স্বপ্নে) দেখেছি এগারটি তারকা আর সূর্য ও চন্দ্র; দেখলাম তারা আমাকে সাজদাহ করছে।’ 
    * ইউসুফ 12:5
    তার পিতা বললেন, ‘হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না। যদি কর তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। শাইত্বান তো মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। 

    * ইউসুফ 12:6
    (حَادِيثِ) = ব্যাক্ষা

    (স্বপ্নে যেমন দেখেছ) এভাবে তোমার প্রতিপালক তোমাকে মনোনীত করবেন, তোমাকে স্বপ্নের কথার মর্মমূলে পৌছানো শিখাবেন ("ব্যাখ্যা" শিক্ষা দিবেন)।

    * ইউসুফ 12:100
    (هَٰذَا تَأْوِيلُ) = ব্যাক্ষা

    সে তার পিতা-মাতাকে সিংহাসনে উঠিয়ে নিল আর সকলে তার সম্মানে সাজদাহয় ঝুঁকে পড়ল। ইউসুফ বলল, ‘হে পিতা! এ-ই হচ্ছে আমার সে আগের দেখা স্বপ্নের "ব্যাখ্যা"। আমার রব্ব একে সত্যে পরিণত করেছেন, তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি আমাকে কয়েদখানা থেকে বের করে এনেছেন। 

    * ইউসুফ 12:101
    (حَادِيثِۚ) = ব্যাক্ষা

    ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজত্ব দান করেছ, আর আমাকে স্বপ্নের "ব্যাখ্যা" শিখিয়েছ। 

    এ অায়াত গুলো হতে স্পষ্ট হয়ে গেল যে হাদিস এমন এক বিষয় যা কিতাবে লিপিবদ্ধ করা হয়না কোন ফেরেস্তার অাগমনের মধ্যমে। তা শুধুই নবীগণের ইজতিহাদ যা অাল্লাহর পক্ষ হতে নবীগণের অান্তরে এসে থাকে। কিন্তু তা ফেরেস্তাদের মাধ্যেমে অাসা কিতাবে লিপিবদ্ধ করা সত্যের বাণীর চাইতে কোন অংশে কম নয়। যার অধিকাংশই অাল্লাহর কিতাবে অানা হয় নি। কিন্তু এমন বিষয় গুলো মান্য করা সকলের জন্য জরুরি অন্যথায় অকল্যান অবধারিত। অতএব নবী রাসূল গণের কথা, কাজ ও সিদ্ধান্ত সবই ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরঅানেও অধিকাংশ জায়গায় নবীগণের জীবনের ঘটনা বলীর মাধ্যমে ওহীর ব্যাক্ষা বা হাদিস হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যে সমস্ত ওহী নবীগণের প্রতি ফেরেস্তার মাধ্যমে কিতাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। বরং তা কোন প্রমাণ ছারাই শুধু নবীগণের কাছে অাসত। অার তা ছিল শুধুই বোঝার বিষয়, বিশ্বাসের বিষয় এবং অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। এমন হাদিসের ওহী গুলো নবুয়তের প্রাথমীক সময়ে প্রত্যেক নবীই বুঝে উঠতে পরেন নি। যা এই অায়াত গুলোতেও দেখা যাচ্ছে ঈউসুফ (অা:) তার পীতা ইয়াকুব (অা:) নবীকে তার স্বপ্নের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে ছিলেন। ইয়াকুব (অা:) একজন প্রাক্তন নবী হওয়ার কারণে তা তিনি বুঝতে পেরে ছিলেন। পরবর্তীতে ধিরে ধিরে ঈউসুফ (অা:) ও এমন ওহীর হাদিস বা ব্যাক্ষা সম্পর্কে বুঝতে সমর্থ হয়ে ছিলেন। হাদিস মূলত এমনই যা নবীগণের নিজেস্ব হিকমাহ ও ইজতিহাদের ফলে অামাদের কাছে এসেছে। কিন্তু তা সবই অাল্লাহর ইশারা বা ওহী ছিল নবীগণের প্রতি। অার তার ব্যাক্ষা নবীগণের জীবনিতে ফুটে উঠেছে। যা মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনিতেও একই রকম ব্যাপার ছিল। যারা নবীগণের প্রতি ঈমান অানত তারা এমন ওহীকেও স্বীকার করে নিতেন। কারণ যাকে নবী হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয় তারা সকল কথার উপর ঈমান অানাটাও জরুরি। যদি শুধু চোখে দেখা বিষয় গুলোর প্রতি ঈমান অানা হয় অার নাদেখা বিষয় গুলোর প্রতি ঈমান অানা না হয় তবে তা হবে অাংশিক ঈমানের অংশ পরিপূর্ণ নয়।

    * রাসূলে করীমের ইজতিহাদও ওহীর সমপর্যায়ভুক্ত। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁহাকে ভূল ইজতিহাদ করতে দেন নাই। তার ইজতিহাদ কখনো ভূল হয়ে গেলে সেই ভূলের উপরও তাকে কায়েম থাকতে দেয়া হয় নাই। কোন প্রকার ভূল হলে অনতিবিলম্বে আল্লাহর তরফ হতে তার সংশোধন ও বিশুদ্ধ হওয়া অপরিহার্য ছিল। তাই নবী (সা:) এর যে সকল কাজের বিপরিতে অাল্লাহ কোন অায়াত নাজীল করেন নাই তার সবই অাল্লাহর নির্ধারিত পথ ও পথনির্দেশনা বলেই গণ্য করতে হবে। 

    * হাদিস বিকৃত করা সম্ভব কারণ মানব জাতীর পরিক্ষার জন্য অাল্লাহ হাদিসের ক্ষেত্রে এই সুযোগটুকু রেখেছেন যা কুরঅানের ক্ষেত্রে সম্পুর্ণ ভিন্ন। তাই এর সুযোগে কাফির ও মুনাফিকেরা নবীর নামে মিথ্যা কথা বলে তা হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেয়ার প্রয়াশ দেখিয়েছে। একই সাথে অাল্লাহ মানুষকে এই জাল হাদিস অালাদা করার কিছু বুদ্ধি মত্তাও দিয়েছেন। এই প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে যাচাই বাছাই প্রকৃয়াকে কাজে লাগিয়ে মানব জাতী সত্যকে অক্ষুন্ন রাখতে সমস্ত মুসলিম উম্মাহ একত্রিত হয়ে ৬ খানা হাদিস গ্রন্থকে সহিহ হিসেবে বৈধতা দান করেছেন। যাকে সহিহ ছিত্তা বলা হয়ে থাকে। 

    * সহিহ ছিত্তাঃ বুখারি, মুসলিম, সুনানে নাসাই, তিরমিজী, অাবু দাউদ, সুনান ইবনে মাজাহ।

    *** কুরঅান ও হাদিসের বৈশিষ্টের অালোকে প্রাপ্ত বিষয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ: 

    * কুরঅান ও হাদিস উভয়ই অাল্লাহর ওহীর অন্তরর্ভুক্ত। 
    * একটি অাল্লাহর নিজের ভাষায় শব্দ ও অক্ষর হুবহু বাতলে দিয়েছেন যা কিতাব বা কুরঅান এবং ওন্যটি হিকমাহ বা ইজতিহাদের মাধ্যমে নবী করিম (সা:) নিজের মত করে ব্যাক্ষা ও উপস্থাপন করেছেন যা হাদিস।
    * সকল ওহীই নবীগণের জীবন্দশায় সত্য প্রমাণীত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। 
    * সকল ওহীর উপর ঈমান অানা অবশ্য কর্তব্য। তবে মনে রাখতে হবে ঈমান অর্থ শুধু বিশ্বাস করলাম কিন্তু তা কাজে পরিণত করলাম না, এমন নয়। 
    * হাদিসের নির্দেশ কোনটা ফরজ অাবার কোনটা নফল বা ঐচ্ছিক। যেগুলো ফরজ তা কুরঅানের নির্দেশের বাস্তব রুপ। যেমন: কুরঅান বলছে অাল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি করো না। অার হাদিস তার ব্যাক্ষা দিচ্ছে পুরুষের জন্য দাড়ি কাটা যাবে না, নারীর জন্য ভ্রুপ্লাগ করা যাবে না। নারীরা পুষের মত এবং পুরুষেরা নারীদের মত পোশাক পরিধান করতে পারবে না। অার যেগুলো নফল তা অতিরিক্ত ইবাদাত হিসেবেই গণ্য হবে, তা করলে সওয়াব অাছে না করলে গুণাহ নাই। তবে ফরজের মত মনে করে তা পালন করলে অবশ্যই গুণাহ হবে এবং নিজেস্ব কাজকর্মও বাধা গ্রস্থ হবে। যেমন: প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাযের সাথে অতিরিক্ত নামায সমূহ, জাকাত ও ফিতরা ছারাও অতিরিক্ত দান করা ইত্যাদি।

    * কুরঅানের অায়াতের বিকৃতি করা সম্ভব নয় কারণ তা অাল্লাহ নিজেই সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। হাদিস সংরক্ষণ এর দায়িত্ব অাল্লাহ নেন নাই বলে তা বিকৃত করা সম্ভব হয়েছে। 

    * কুরঅানের অায়াত অবিকৃত রেখেই মুসলীম উম্মাহর মধ্য মতবিরোধ সৃষ্টি করা সম্ভব। অার এই পথই তারা বেছে নিয়েছে। তবে হাদিসের বিকৃতি না করে মুসলীম উম্মাহর মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই তারা হাদিসের বিকৃতি করে বিভিন্ন রকম জাল ও জয়িফ হাদিস তৈরি করেছে।

    ** মন্তব্যঃ এমন পার্থক্য দেখে মনে হতে পারে হাদিসের চেয়ে কুরঅানের মর্যাদা কম, অাসলে তা নয়। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে কুরঅান ও হাদিস মানব জাতীর জন্য একটা পরিক্ষা। অার এই পরিক্ষার ২টা পথ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। কুরঅানকে বিকৃত না করেই কতটা পরিশ্রম ও বুদ্ধি খাটিয়ে মুসলীম উম্মাহর ভেতর মতবিরোধ সৃষ্টি করা হচ্ছে তা অামরা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারি। কিন্তু হাদিসের ব্যাপারে এতটা পরিশ্রম করতে হয়নি। কারণ যখন যার যেটা মনে হয়েছে, রাসূলের যে নির্দেশটা তার মানতে কষ্ট হয়েছে তার বিপরিত একটা কথা নবীর নামে চালিয়ে দিয়েছে। তাই বিবেচনা করে দেখুন কুরঅানের মর্যাদা এখানে কমেনি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। অাসলে প্রকৃত বিষয় হচ্ছে কোনটাই কোনটার চেয়ে মর্যাদায় কম নয় কারণ কুরঅান ও হাদিস উভয়টি অাল্লাহর পক্ষ থেকে। মানব জাতীর জন্য মহা পরিক্ষা। অার এর দ্বারা অাল্লাহ বাছাই করতে চান মুমিনদের থেকে কাফিরদেরকে। যাতে কেও অশ্বিকার করতে না পারে যে তারা এসব না বুঝেই করেছে। 

    # হাদিস অশ্বিকারকারিদের যুক্তি খন্ডন: 

    * কিছু ইবাদাতের নাম উল্লেক্ষ করা হয়েছে কিন্তু তা কি ও কবে এবং কিভাবে করতে হবে তা বলে দেয়া হয়নি কুরঅানে। যেমন: লাইলাতুল কদর, অাজানের বাক্য, নামাযের ওয়াক্ত সমূহের সম্পুর্ণ নাম, জুম্মার নামায ইত্যাদি। কিন্তু এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা হাদিসে পাওয়া যায়। 

    * প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ অাশ্বাদন করবে। অাবার অাত্নহত্য মহা পাপ। তাহলে অাজরাইল কি নিজের জান নিজেই কবজ করবে? নাকি ওন্য কেও করবে। নাকি তার জন্য নিজের জান কবজ করা গুনাহ হবে না। এ সব বিষয়ের বিস্তারিত কুরঅানে নাই হাদিসে অাছে।

    * কুরঅান বলছে জান্নতে থাকবে চির কিশোররা যারা পান পাত্র নিয়ে ছোটা ছুটি করবে। অার হাদিস বলছে এই বাচ্চারা হবে তারাই যারা প্রাপ্ত বসষ্ক হওয়ার অাগেই মারা যায় যারা এখনও ভালো মন্দ বোঝার বয়স হয়নি তাদের মধ্য হতে কিছু সংক্ষক অাবার ওন্যদের মধ্য হতেও। 

    ** নামায কি কখন ও কিভাবে পরতে হয়: 
    * আল-বাক়ারাহ 2:238
    তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। 
    * আল-বাক়ারাহ 2:239
    যদি তোমরা ভয় কর, তবে পদচারী কিংবা আরোহী অবস্থায়ই নামায আদায় করবে। যখন নিরুদ্বেগ হবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।

    ** মন্তব্য: এখানে মধ্যবর্তী সলাত বলতে কোন সময় বলা হয়েছে, তাকি রাতের নাকি দিনের মধ্যবর্তী সময়। নিরুদ্বেগ কি এবং নিরুদ্বেগ হলে অাল্লাহ কি শিক্ষা দিয়েছেন এর সঠিক ব্যাক্ষা হাদিসে রয়েছে। কিছু মুনাফিকের দল এই অায়াত গুলোর বিভিন্ন মত তৈরি করেছে। তাই এর একমাত্র সমাধান হাদিস।

    ** নামায পরতে রুকু এবং সিজদাহ কিভাবে করতে হবে:

    * আল-আনফাল 8:35
    আল্লাহর ঘরের নিকট তাদের নামায হাত তালি মারা আর শিশ দেয়া ছাড়া আর কিছুই না, (এসব অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে বলা হবে) ‘‘আযাব ভোগ কর যেহেতু তোমরা কুফরীতে লিপ্ত ছিলে’’। 
    * আল-ক়ালাম 68:42
    যেদিন (ক্বিয়ামতে) পায়ের গোছা (হাঁটুর নিম্নভাগ) উন্মোচিত হবে আর তাদেরকে ডাকা হবে সেজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সেজদা করতে সক্ষম হবে না। 
    * আল-ক়ালাম 68:43
    তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমান লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখনও তাদেরকে সেজদা করার জন্য ডাকা হত (কিন্তু তারা সেজদা করত না) 

    ** মন্তব্য: মুনাফিকদের কিছু গোষ্ঠি অামাদের প্রচলিত সিজদাহকে অশ্বিকার করছে। তারা বলছে অাল্লাহর প্রতি অনুগত থাকাই সিজদাহ মাথা নোয়ানোর কোন দরকার নেই। কারণ কুরঅানে কোথাও সিজদাতে মাথা নোয়ানের কথা বলা নেই। কিন্তু এর সমাধান হাদিসে স্পষ্ট রয়েছে যা সকল যুক্তি তর্কের অবসান ঘটাবে।

    * আল-মুদ্দাসসির 74:48
    তখন সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না।

    ** মন্তব্য: বিচার দিনে কে বা কারা হবে সুপারিশকারীদের অন্তরর্ভুক্ত। কার সুপারিশ কাজে লাগবে অার তারা কারা যাদের সুপারিশ কাজে লাগবে না। এসব বিষয় কুরঅানে শুধু ইঙ্গিত করে যাওয়া হয়েছে। যার ফলে অনেক গোষ্ঠি নিজেদের সুবিধা মত ইজতিহাদ দিয়ে নানা মতের সৃষ্টি করেছ। কিন্তু সহিহ হাদিস দ্বারা বলা হচ্ছে সুপারিশ গ্রহণ করার মত ব্যাক্তি হচ্ছে নবীগণ এবং তার সাক্ষ দান করবে নবীগণের সাথে শুহাদা (সাক্ষদাতা) বা শহীদগণ। কারণ অাল্লাহ তাদের প্রত্যেককেই যুগের সাক্ষি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যারা করঅান ও সহিহ হাদিসের অানুষারি পৃথিবীতে তারা কখনই কোন বিষয়ে দ্বিমত পোশনা করেন না। সহিহ হাদিস অনুষরণ না করার কারণে এমন নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। যদি রাসূলের এই বাণীগুলোর অনুষরণ করা হত তবে এমন ভিন্ন মতের সৃষ্টি হতে পারত না।

    * আলি ‘ইমরান 3:152
    (উহূদের রণক্ষেত্রে) আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় ওয়া‘দা সঠিকরূপে দেখালেন, যখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশে কাফিরদেরকে নিপাত করছিলে, অতঃপর যখন তোমরা নিজেরাই (পার্থিব লাভের বশে) দুর্বল হয়ে গেলে এবং (নেতার) হুকুম সম্বন্ধে মতভেদ করলে এবং তোমাদেরকে তোমাদের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু দেখানোর পর তোমরা অবাধ্য হলে, তোমাদের কেউ কেউ দুনিয়ার প্রত্যাশী হলে এবং কেউ কেউ পরকাল চাইলে, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে শত্রুদের হতে ফিরিয়ে দিলেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, আল্লাহ অবশ্য তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন, বস্তুতঃ আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল। 

    এই অায়াতটি কোন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের কথা বলছে, কোন ওয়াদার কথা বলছে, কোন নির্দেশ কে অমান্য করেছিল তা এই অায়াতে নেই এমন কি কুরঅানের কোথাও নেই। তাহলে কি করে বুঝা যাবে কার নির্দেশ এবং কি নির্দেশের অবমাননা করার জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে নবী (সা:) সহ সকল মুমিনরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছিল যা থেকে অামরা শিক্ষা নিতে পারি। কিন্তু হাদিস বলছে উহুদ যুদ্ধের পরপরি এই অায়াত নাজীল হয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে নবী (সা:) খুদ্র খুদ্র দলে মুমিনদের ভাগ করে দিচ্ছিলেন এক এক দায়িত্ব দিয়। প্রত্যেক দলেই ১ জন নেতা নিজুক্ত করে দিয়েছিলেন। কেও পাহাড়ের চুড়ায়, কেও নিচে, কেও গিরি পথের শুরুতে, কেও খোলা ময়দানে, অাবার কেও তাবুর কাছা কাছি। তাদের একটি দলকে বলেদেয়া হল তারা যেন একটি নির্দিষ্ট গিরিপথের সম্মুখে চুড়ায় অবস্থান করে। নবী (সা:) এর নির্দেশ না অাসা পর্যন্ত কেও যেন এখান থেকে সরে না যায় তাতে যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন। যুদ্ধ শুরু হল নবী (সাঃ) এর এমন বিচক্ষণতায় ও অাল্লাহর রহমতে মুলিমরা বিজয়ের দারপ্রান্তে। কাফিররা পিছু হটতে শুরু করল। এমন পরিস্থিতিতে গিরিপথে অবস্থানরত মুসলিম বাহিনীটির যুদ্ধে নিজেদের তেমন কোন কার্যক্রম না থাকায় তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিল কাফিরদের ফেলে যাওয়া গণীমত সংগ্রহ করার। এমন সময় গিরিপথের অপরপাশে লুকিয়ে থাকা কাফির বাহিনী খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পরল। যুদ্ধের পরিস্থিতী বদলে গেল। মুসলীম বাহিনী খালিদ বিন ওয়ালিদের কাছে পরাজীত হল। এই পরাজয় শুধু মাত্র একটি নির্দেশ ভঙ্গের কারণে। এটাই হচ্ছে কুরঅানের ঐ নির্দেশ ভঙ্গের ইতিহাস যা নবী (সাঃ) নিজেই দিয়ে ছিলেন। এটা কোন কুরঅানের অায়াত দ্বারা দেয়া হয়নি। এটা ছিল নবী (সাঃ) এর নিজের ইজতিহাদ ও অাল্লাহর পক্ষ থেকে ইঙ্গিত। এর দ্বারা অাবারও প্রমাণীত হল অাল্লাহ ও নবী (সাঃ) দুজনের কারো একজনের কাছ থেকে কোন নির্দেশ ও ফায়সালা অাসলে তা কোন মুসলীমের পক্ষে কোন রকম ইজতিহাদ করার অবকাশ থাকে না। মুসলীমদের দ্বায়িত্ব শুধু শোনা ও বিনা বাক্যব্যায়ে তা মেনে নেয়া।

    যদিও হাদিস অশ্বিকারকারীরা বলে থাকে এসব অায়াতের এখন অার কোন ভেলু নাই এসব অায়াতের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে। তাদের মতে কুরঅানের ৫ ভাগের ৩ ভাগ অায়াতের এখন অারকোন কার্যকারিতা নেই। কারণ তাদের মতে এগুলো নবী (সা:) এর ওফাতের পরেই ২ ভাগের কার্যকারিতা শেষ হয়েগেছে। যেমন নবীর অনুষরণ কর, তাকে সাহায্য কর, তার জন্য এটা শ্রেয়, তার জন্য ঐটা শ্রেয় নয়, তার জন্য ঐটা যথেষ্ট, এর পরথেকে অাপনি এটা অার করতে পারবেন না, এটা করা অাপনার জন্য বাধ্যতা মূলক, এমনটা করা অাপনার জন্য কখনই ঠিক নয়, নবী (সাঃ) এর কথা মেনে চলা ইত্যাদি এমন কথা সম্বলিত অায়াত সমূহ তাদের মতে বর্তমানে অার কোন কার্যকারিতা নাই, অার হাদিসতো প্রশ্নই অাসে না। একভাগ ইতিহাস তাই তার অার কোন প্রয়োজন নাই। অার কিছু অাছে অস্পষ্ট তাই এর সঠিক কোন ভেলু নাই তা মানলেও হবে না মানলেও কোন সমস্যা নেই। অার কিছু অাছে সংক্ষেপে তা নিজেদের মনে যা চায় তা দিয়ে ইজতিহাদ করে সম্পুর্ণ করে নিয়ে মানলেই হবে। অর্থাৎ ৩ ভাগ সম্পর্ণ বিনষ্ট অার এক ভাগ নিজেদের মন মতো বাকী থাকবে এক ভাগ। এই হচ্ছে হাদিস অশ্বিকারকারীদের কুরঅান অনুষরণের প্রকৃত অবস্থা। ওন্য দিকে জাল জয়িফ হাদিসের অনুষারিরা নিজেদের স্বাধিন মত তৈরি করে এর অপব্যাক্ষা তৈরি করেই চলেছে। তাদের কেও নবী (সা:) কে এমন এক অাকাশ কুশুম সম্মানে বসিয়েছেন যা নবী (সা:) নিজেও জানতেন না অার অাল্লাহও এমন সম্মান তাকে দান করেন নাই। 

    চলবে (_ _ _ _)